জাতীয় সমাবেশে উত্তাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান: জামায়াতের রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শন

INFO TODAY BANGLA

 


শনিবার দুপুর নাগাদ ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এই প্রথমবারের মতো এই ভেন্যুতে একক জাতীয় সমাবেশের আয়োজন করেছে, যেখানে সারাদেশ থেকে লাখো নেতা-কর্মী ও সমর্থকের ঢল নেমেছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে জামায়াতের এই সমাবেশ রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

দুপুর ২টায় সমাবেশের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে, যেখানে জামায়াতের আমীর ড. শফিকুর রহমান সভাপতিত্ব করবেন। সমাবেশে জামায়াতের মূল দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে মুক্ত, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করা, রাজনৈতিক সংস্কার, জুলাই সনদ প্রবর্তন এবং জাতীয় নির্বাচনে সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি গ্রহণ।

বৃহস্পতিবার রাত থেকেই সমাবেশে যোগ দিতে ভেন্যুতে ভিড় জমতে শুরু করে। অনেকে ভোরে ফজরের নামাজ আদায় করেন উদ্যানের মাঠে। শনিবার সকালে ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জামায়াতের নেতা-কর্মীদের বড় বড় মিছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে এগিয়ে আসতে দেখা গেছে। তারা সমাবেশের সমর্থনে স্লোগান দিচ্ছিলেন। এছাড়া, অনেক কর্মী শহরের মেট্রোরেল নেটওয়ার্কে ভিড় করেছেন বলে জানা গেছে।

শুক্রবার জুমার নামাজের পর জামায়াতের সদস্যরা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন মসজিদের সামনে লিফলেট বিতরণ করে জনসমর্থন বাড়ানোর চেষ্টা করেন। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির নেতারা জানান, তারা বিএনপি, ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনসিপি) এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সমাবেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে সমাবেশ

এই সমাবেশটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন সম্প্রতি গোপালগঞ্জে এনসিপির একটি সমাবেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীদের দ্বারা হামলার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনা রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

শনিবার সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয় সাইফুল্লাহ মনসুরের উপস্থাপনায় এবং সাইমুম সাংস্কৃতিক গ্রুপের পরিচালনায় একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। বিভিন্ন বিভাগ থেকে আগত শিল্পীরা এতে অংশ নেন।

আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই মাঠ পুরোপুরি পূর্ণ হয়ে যায়। অতিরিক্ত জনসমাগমের কারণে কিছু সিনিয়র নেতা পাশের রমনা পার্কে আশ্রয় নেন। তীব্র গরমে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা গেছে। কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েন, এবং অনেকে রমনা পার্কের গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিতে দেখা গেছে।

জামায়াতের দাবি ও প্রস্তুতি

জামায়াতের দাবি, এটি তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় একক রাজনৈতিক সমাবেশ। প্রায় এক মাসের প্রস্তুতির পর দলটি অনুমান করছে, সমাবেশে দশ লাখেরও বেশি মানুষ অংশ নেবেন। এর আগে জামায়াত বিএনপির সঙ্গে যৌথভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করলেও, এটি তাদের প্রথম বড় একক রাজনৈতিক প্রদর্শনী।

১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে এই সমাবেশকে অবস্থান করছে জামায়াত। নেতারা “জাতীয় ঐক্য” ও “কল্যাণ রাষ্ট্র” প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন। ড. শফিকুর রহমান সাত দফা দাবির ভিত্তিতে ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বক্তৃতা দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

ব্যাপক আয়োজন

বিশাল জনসমাগমের জন্য আয়োজকরা ৫০০টির বেশি অস্থায়ী টয়লেট, ১,০০০ পানির কল, ১৫টি মেডিকেল বুথ, ১৫টি পার্কিং জোন এবং হাজার হাজার চেয়ারের ব্যবস্থা করেছেন। প্রায় ৬,০০০ স্বেচ্ছাসেবক লজিস্টিক ও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া, ঢাকার প্রধান প্রধান স্থানে ৪০০টির বেশি লাউডস্পিকার এবং ৫০টি বড় এলইডি স্ক্রিন স্থাপন করা হয়েছে সমাবেশটি সম্প্রচারের জন্য।

দুর্ঘটনায় নেতাদের মৃত্যু

ঢাকায় সমাবেশে যোগ দিতে আসার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় জামায়াতের দুই নেতা নিহত হয়েছেন, যা সমাবেশের উৎসাহের মধ্যে শোকের ছায়া ফেলেছে।

জামায়াতের সমর্থকরা বাস, ট্রেন ও লঞ্চে করে রাজধানীতে এসেছেন। সমাবেশের কারণে সৃষ্ট যানজট ও অসুবিধার জন্য দলটি জনসাধারণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছে।


সত্যের সাথে, সময়ের সাথে – ইনফো টুডে বাংলা

সময়োপযোগী খবর ও তথ্যভিত্তিক আপডেট শেয়ার করার একটি নির্ভরযোগ্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম
To Top