লিবিয়ার মর্গের মরদেহটি কি মুসা আল-সদরের, অর্ধশতাব্দীর রহস্য কি উন্মোচনের পথে?

INFO TODAY বাংলা


লিবিয়ার একটি গোপন মর্গে পাওয়া মরদেহকে ঘিরে ফের আলোচনায় এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের বহুল আলোচিত রহস্য—১৯৭৮ সালে লেবাননের শিয়া নেতা ও প্রভাবশালী ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ইমাম মুসা আল–সদরের অন্তর্ধান। বিবিসির সাম্প্রতিক অনুসন্ধান বলছে, মরদেহটির সঙ্গে সদরের সাদৃশ্য উল্লেখযোগ্য; তবে পরিবার ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল আমল এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।

৪৭ বছরের অমীমাংসিত রহস্য

১৯২৮ সালে ইরানে জন্ম নেওয়া মুসা আল–সদর ১৯৫৯ সালে লেবাননে পাড়ি জমান। অল্প সময়েই তিনি শিয়া সম্প্রদায়ের অগ্রগণ্য নেতা হয়ে ওঠেন এবং ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘মুভমেন্ট অব দ্য ডিপ্রাইভড’, যা পরবর্তীতে আমল আন্দোলনে রূপ নেয়। শিয়াদের সামাজিক–রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সব ধর্মের সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করতেন তিনি।

১৯৭৮ সালের আগস্টে লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির আমন্ত্রণে ত্রিপোলি সফরে যান সদর। ৩১ আগস্ট তাকে শেষবার একটি হোটেল ছাড়তে দেখা যায়। লিবিয়ার দাবি ছিল, তিনি রোমে গেছেন; কিন্তু ইতালির তদন্তে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়। এরপর থেকে সদর নিখোঁজের রহস্য অমীমাংসিত রয়ে গেছে।

গোপন মর্গের আবিষ্কার

২০১১ সালে আরব বসন্তের অস্থিরতার সময় লেবানিজ–সুইডিশ সাংবাদিক কাসেম হামাদে ত্রিপোলির এক মর্গে প্রায় ১৭টি মরদেহ দেখতে পান। সেখানকার একটি দেহের উচ্চতা ও শারীরিক গঠন ইমাম সদরের সঙ্গে মিলে যায় বলে তিনি জানান। ছবিতে দেখা যায়, মাথার খুলি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। হামাদে কিছু নমুনা সংগ্রহ করলেও পরে তা রহস্যজনকভাবে হারিয়ে যায়।

এআই প্রযুক্তির বিশ্লেষণ

ব্রিটেনের ব্র্যাডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানী অধ্যাপক হাসান উগাইল মরদেহটির ছবিতে ‘ডিপ ফেস রিকগনিশন’ প্রযুক্তি প্রয়োগ করেন। বিশ্লেষণে দেখা যায়, ছবিটি ইমাম সদরের জীবদ্দশার ছবির সঙ্গে ৬০ শতাংশের বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ। তবে গবেষকেরা স্পষ্টভাবে জানান, এটি কেবল সম্ভাবনার ইঙ্গিত—নিশ্চিত প্রমাণের জন্য ডিএনএ পরীক্ষা অপরিহার্য।

পরিবারের আপত্তি ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

ইমাম সদরের ছেলে সাদরুদ্দিন আল–সদর এবং আমল আন্দোলন এ বিশ্লেষণকে নাকচ করেছেন। তাঁদের দাবি, ছবির মরদেহটি ইমাম সদরের নয়। লেবাননের রাজনীতিতে এখনো তাঁর স্মৃতি প্রভাব বিস্তার করছে। আমল আন্দোলন বর্তমানে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল, আর এর নেতৃত্বে থাকা পার্লামেন্ট স্পিকার নাবিহ বেরি দাবি করেন—সদর জীবিত আছেন এবং লিবিয়ার কারাগারে আটক। তবে এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

তদন্তে বাধা ও ঝুঁকি

বিবিসি টিম যখন এ নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে, তখন লিবিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা তাদের আটক করে ছয় দিন জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে কূটনৈতিক তৎপরতায় তারা মুক্তি পায়। পর্যবেক্ষকদের মতে, গাদ্দাফি আমলের প্রভাবশালীরা এখনো চান না এই রহস্য পুরোপুরি উন্মোচিত হোক।

চূড়ান্ত উত্তর কোথায়?

বিগত কয়েক দশকে নানা তত্ত্ব–জল্পনা ছড়ালেও আজ পর্যন্ত কোনো নিশ্চিত প্রমাণ সামনে আসেনি। গবেষকেরা বলছেন, কেবল ডিএনএ পরীক্ষাই জানাতে পারে লিবিয়ার ওই মর্গে পাওয়া মরদেহ আসলেই ইমাম মুসা আল–সদরের কি না।

প্রতি বছর ৩১ আগস্ট লেবাননে তাঁকে স্মরণ করে শোক পালিত হয়। প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে অমীমাংসিত থেকে যাওয়া এই রহস্য এখনো লেবানন ও লিবিয়ার সম্পর্কের জটিল অধ্যায় হয়ে আছে।

সত্যের সাথে, সময়ের সাথে – ইনফো টুডে বাংলা

সময়োপযোগী খবর ও তথ্যভিত্তিক আপডেট শেয়ার করার একটি নির্ভরযোগ্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম
To Top