ময়মনসিংহ সীমান্তে অবৈধ বালু উত্তোলন: সীমানা পিলার বিলীন, আন্তর্জাতিক সীমারেখা পরিবর্তনের আশঙ্কা বিজিবির

INFO TODAY বাংলা


রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫


ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলার সীমান্ত নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে এরই মধ্যে দুটি সীমানা পিলার বিলীন হয়ে গেছে এবং আন্তর্জাতিক সীমারেখা মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে ময়মনসিংহ বিজিবি-৩৯ ব্যাটালিয়ন দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই গুরুতর উদ্বেগ ও আশঙ্কার কথা তুলে ধরেন ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মেহেদী হাসান।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী হাসান জানান, অনিয়ন্ত্রিত বালু উত্তোলনের কারণে হালুয়াঘাটের বরাক নদে এরই মধ্যে দুটি সীমানা পিলার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া ধোবাউড়া উপজেলার নেতাই নদে আরও দুটি পিলার বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, "সীমান্ত পিলারগুলো যেভাবে বিলীন হচ্ছে তাতে দেশের সীমানা নির্ধারণ করা দুষ্কর হয়ে যাবে।"

বিজিবি অধিনায়ক বলেন, হালুয়াঘাটের বরাক নদে ১১১ নম্বর ঘোষগাঁও মৌজায় বালু উত্তোলনের বৈধ ইজারা থাকলেও একটি অসাধু ও কুচক্রী মহল রাতের আঁধারে ইজারাবহির্ভূত ১০৭ ও ১০৮ নম্বর মৌজা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। সীমান্তের শূন্যরেখার খুব কাছ থেকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ড্রেজার মেশিন ব্যবহার করে এই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে, যা সীমান্ত আইন পরিপন্থী।

এই অবৈধ কর্মকাণ্ডের ফলে নদীর তীরবর্তী এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ভাঙনের কবলে পড়ে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড, কৃষিজমি, স্থানীয়দের বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক সীমানারেখাকে পরিবর্তিত হওয়াসহ নানা জটিলতা তৈরি করছে। বিজিবি কর্মকর্তা এ পরিস্থিতিকে সিলেটের সাদা পাথর এলাকার অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

উত্তোলিত বালু ট্রাক্টর, অটোভ্যান ও ট্রলির মাধ্যমে পরিবহন করায় সীমান্ত এলাকার স্থানীয় সড়কগুলো ব্যবহারের প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে শিক্ষার্থী ও রোগীসহ সাধারণ মানুষের চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী হাসান জানান, সীমান্ত সুরক্ষা মূল দায়িত্ব হলেও বিজিবি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যৌথভাবে টাস্কফোর্স অভিযান পরিচালনা করছে। চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আটটি অভিযানে প্রায় ৩০ হাজার ঘনফুট বালু এবং গত ছয় মাসে এক লক্ষাধিক ঘনফুট বালু ও প্রায় ১০০টি যানবাহন জব্দ করা হয়েছে। তবে তিনি উল্লেখ করেন, আসামিরা জামিনে মুক্তি পেয়ে পুনরায় একই কাজে লিপ্ত হওয়ায় অবৈধ বালু উত্তোলন পুরোপুরি বন্ধ করা যাচ্ছে না।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবির পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনের কাছে চারটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়েছে। এগুলো হলো—বালুমহাল এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে স্থায়ী চেকপোস্ট স্থাপন, নিয়মিত টাস্কফোর্স অভিযান পরিচালনা, ইজারাকৃত এলাকা মজবুত খুঁটি ও পতাকা দিয়ে স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা এবং অনিয়মে জড়িত কোনো ইজারাদারের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তার ইজারা বাতিল করা।



সত্যের সাথে, সময়ের সাথে – ইনফো টুডে বাংলা

সময়োপযোগী খবর ও তথ্যভিত্তিক আপডেট শেয়ার করার একটি নির্ভরযোগ্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম
To Top