পুরান ঢাকায় ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যার ঘটনায় দুইজন আটক।
ঢাকা, ১১ জুলাই ২০২৫: রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের তিন নম্বর গেট সংলগ্ন রজনী ঘোষ লেনে বুধবার (১০ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টার দিকে মো. সোহাগ (৩৯) ওরফে লাল চাঁদ নামে এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় যুবদল নেতা মঈন ও জনি নামে দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। নিহত সোহাগ কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পূর্ব নামাবাড়ি গ্রামের ইউসুফ আলী হাওলাদারের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে রজনী ঘোষ লেনে ভাঙারি ব্যবসা পরিচালনা করতেন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সোহাগের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে একটি চক্রের দীর্ঘদিনের বিরোধ চলছিল। এই বিরোধের জের ধরে মঙ্গলবার রাতে গুলির ঘটনা এবং পরে বুধবার সন্ধ্যায় এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। সোহাগ একসময় যুবদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তবে বর্তমানে তার রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নিয়ে স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
নিহতের বন্ধু মামুন জানান, গত দুই-তিন মাস ধরে মঈন সোহাগের কাছে প্রতি মাসে চাঁদা দাবি করতেন। সোহাগ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মঈন তাকে হুমকি দেন। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় সোহাগকে একা পেয়ে মঈন ও তার ৪-৫ জন সহযোগী পাথর দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করেন। এ সময় তারা সোহাগের পরনের পোশাকও খুলে ফেলেন। স্থানীয়রা ভয়ে ঘটনাস্থলে এগিয়ে যেতে পারেননি। মঈনের বিরুদ্ধে মিটফোর্ড হাসপাতালের ফুটপাত ও কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তোলার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া হাসপাতালের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, যা নিয়ে ফেসবুকে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। কেউ কেউ এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে বিশ্বজিৎ দাসের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন। সে সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একদল কর্মী বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে-পিটিয়ে হত্যা করেছিল, যা দেশজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান জানান, এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং মঈন ও জনি নামে দুজনকে আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, “ভাঙারি ব্যবসাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল। প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি, এই বিরোধ থেকেই হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
লালবাগ থানা ছাত্রদলের সদস্য সচিব রাব্বি জানান, মঈন যুবদলের একজন সক্রিয় কর্মী। তবে তিনি দাবি করেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মঈন এ ধরনের কাজে জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা কম।
এ ঘটনা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে তারা কাজ করছে।
VIDEO LINK - YouTube