জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পেরিয়ে গেলেও দৃশ্যমান বিচার না হওয়া এবং নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগে ময়মনসিংহে ‘জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের’ সদস্যরা রোববার (৫ অক্টোবর) থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেছেন, যা সোমবার দ্বিতীয় দিনেও চলছে।
ময়মনসিংহ, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫
দৃশ্যমান ফ্যাসিস্টদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সামনে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন ‘জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের’ সদস্যরা। রোববার (৫ অক্টোবর) দুপুর থেকে শুরু হওয়া এই অনশন দ্বিতীয় দিনের মতো অব্যাহত রয়েছে।
এই কর্মসূচির আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা করেছে শহীদ ও আহত সেল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং বিপ্লবী জুলাই যোদ্ধা ময়মনসিংহ বিভাগ। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ময়মনসিংহ বিভাগীয় সমন্বয়ক আল নূর (মোহাম্মদ আয়াস) অনশনের ঘোষণা দেন। তাঁর সঙ্গে বিভাগের বিভিন্ন উপজেলা—শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহের শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিরা যোগ দেন।
বিরতিহীন বৃষ্টির মধ্যেও শহীদ পরিবারের নারী সদস্যরা হাতে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে স্বজন হত্যার বিচারের দাবিতে স্লোগান দেন। তাদের দাবি—অভ্যুত্থানের পরও এখনো বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়নি; বরং প্রশাসনের সহযোগিতায় অভিযুক্তরা অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
বিপ্লবী জুলাই যোদ্ধার সমন্বয়ক আল নূর অভিযোগ করেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও দৃশ্যমান কোনো বিচার দেখছি না। প্রশাসনের সহায়তায় আওয়ামী লীগের দোসররা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আমরা অবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানাচ্ছি।”
অনশনে অংশ নেওয়া শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার শহীদ শাহাদাত হোসাইনের স্ত্রী সোনিয়া আক্তার বলেন, “আমি ঢাকায় এবং আমার শাশুড়ি শেরপুর আদালতে হত্যার ঘটনায় দুটি মামলা করেছি। কিন্তু স্থানীয় এক বিএনপি নেতা আমাকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছেন।”
তিনি জানান, মামলায় গ্রেপ্তার শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি চন্দন কুমার পাল ১৮ দিন পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন এবং এখন শহীদ পরিবারের সদস্যদের প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছেন। সোনিয়ার অভিযোগ, “প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া এমন জামিন সম্ভব নয়।”
অনশনকারীরা জানান, মামলা ও তদন্ত প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার মাধ্যমে বিচার প্রভাবিত করা হচ্ছে। তাঁরা প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা ও কার্যকর পদক্ষেপ দাবি করেছেন।
এনসিপি ময়মনসিংহ জেলা কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট এ টি এম মাহবুবুল আলম অনশনে এসে সংহতি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও শহীদ ও আহত পরিবারের সদস্যরা এখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন—এটি রাষ্ট্রের ব্যর্থতা। দোষীদের গ্রেপ্তার ও পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”
প্রতিবাদকারীরা ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁদের দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এই আমরণ অনশন অব্যাহত থাকবে।