বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘অর্ধেক সিদ্ধান্তহীন ভোটার’: সামনে কি নতুন সমীকরণ!

INFO TODAY বাংলা

 



অনলাইন ডেস্ক রিপোর্ট । ২৫ আগস্ট ২০২৫, সোমবার 

ঢাকার ব্যস্ত এক মোড়ে এক চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল কয়েকজন তরুণের সঙ্গে। প্রশ্ন একটাই—আগামী জাতীয় নির্বাচনে কাকে ভোট দেবেন? বেশিরভাগ তরুণই হেসে উত্তর দিলেন, “এখনো ঠিক করিনি। কারও ওপরই পুরো ভরসা পাওয়া যাচ্ছে না।” এই কথাই যেন প্রতিফলিত করছে সাম্প্রতিক জরিপের ফলাফল—বাংলাদেশে এখন প্রায় অর্ধেক ভোটারই সিদ্ধান্তহীন।


জরিপের চিত্র

BRAC Institute of Governance and Development (BIGD)Voice for Reform–এর জুলাই ২০২৫ জরিপ অনুযায়ী, দেশের প্রায় ৪৮.৫ শতাংশ ভোটার এখনও ঠিক করে উঠতে পারেননি কাকে সমর্থন করবেন। এ সংখ্যা শুধু বড় নয়, বরং পুরো রাজনৈতিক সমীকরণ পাল্টে দেওয়ার মতো।

দলভিত্তিক জনপ্রিয়তার চিত্রও কম বিস্ময়কর নয়।

  • বিএনপি এখন প্রায় ১২ শতাংশ ভোটারের সমর্থন পাচ্ছে, যেখানে ২০২৪ সালের শেষ দিকে ছিল ১৬ শতাংশের ওপরে।

  • আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা নেমে এসেছে ৭.৩ শতাংশে

  • জামায়াত-ই-ইসলাম রয়েছে ১০.৪ শতাংশে

  • জাতীয় পার্টি কার্যত তলানিতে—মাত্র ০.৩ শতাংশ

  • তুলনামূলকভাবে নতুন শক্তি ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (NCP) সাধারণ ভোটে এখনো মাত্র ২.৮ শতাংশ, কিন্তু এদের শক্তি লুকিয়ে আছে তরুণ সমাজে।


তরুণ ভোটারদের ভিন্ন সমীকরণ

SANEM পরিচালিত মে-জুন ২০২৫ জরিপ বলছে, ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ভোটারদের চিত্র একেবারেই আলাদা। এখানে—

  • বিএনপি পেয়েছে ৩৭.৪৫ শতাংশ,

  • জামায়াত ২১.৭২ শতাংশ,

  • NCP ১৫.৩ শতাংশ,

  • আওয়ামী লীগ ১৪.৫১ শতাংশ,

  • জাতীয় পার্টি ৩.৬৪ শতাংশ

অর্থাৎ তরুণদের কাছে পুরনো দলগুলোর প্রভাব থাকলেও বিকল্প হিসেবে NCP দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রবণতা আগামী নির্বাচনে বড় ধরনের চমক আনতে পারে।


কেন এত অনিশ্চয়তা?

বাংলাদেশের ভোটাররা কেন এতটা বিভ্রান্ত? এক রাজনৈতিক গবেষকের ভাষায়, “একদিকে বড় দলগুলোর দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব, দুর্নীতির অভিযোগ আর ব্যর্থ প্রতিশ্রুতিগুলো ভোটারদের আস্থায় ফাটল ধরিয়েছে। অন্যদিকে নতুন শক্তিগুলো পুরোপুরি বিকশিত হতে পারেনি। ফলে জনগণ অপেক্ষা করছে শেষ মুহূর্তের পরিস্থিতি দেখার।”

আওয়ামী লীগের সমর্থন কমার পেছনে দীর্ঘ শাসনকাল, নিষেধাজ্ঞাজনিত রাজনৈতিক সংকট ও অভ্যন্তরীণ নেতৃত্বের প্রশ্ন বড় ভূমিকা রাখছে। বিএনপি যদিও মাঠে সক্রিয়, তবুও ধারাবাহিক আন্দোলনের পরও তাদের জনপ্রিয়তা স্থিতিশীল রাখতে পারছে না। জামায়াত তুলনামূলকভাবে তরুণ ভোটারদের মধ্যে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। আর NCP, যদিও নতুন, তরুণ সমাজে ‘বিকল্প’ হিসেবে জায়গা করে নিচ্ছে দ্রুত।


জনমতের প্রতিফলন

রাজনৈতিক মাঠে সরাসরি গেলে বোঝা যায়, মানুষ পরিবর্তন চায়। চট্টগ্রামের এক দোকানদার বললেন, “দুই বড় দলকে অনেক সুযোগ দিয়েছি। এবার নতুন কাউকে দেখতে চাই।” আবার ঢাকার এক বেসরকারি চাকরিজীবী বললেন, “আসলে ভোট দিলে কী হবে? কেউই তো প্রতিশ্রুতি রাখে না।” এই দুই ধরনের বক্তব্যই প্রতিফলিত করছে দেশের সাধারণ ভোটারের মানসিকতা।


সামনে কি হতে পারে?

এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—অর্ধেক সিদ্ধান্তহীন ভোটার কোন দিকে যাবে?
যদি তারা শেষ মুহূর্তে কোনো এক পক্ষের দিকে ঝুঁকে পড়ে, তাহলে পুরো নির্বাচনী ফল উল্টে যেতে পারে। আবার ছোট ছোট দলগুলোর জোট রাজনীতিতেও এই ভোটারগোষ্ঠী হতে পারে ‘কিংমেকার’।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তরুণ ভোটারদের মন জয় করতে পারলেই পরবর্তী নির্বাচনের ভাগ্য নির্ধারিত হবে। কারণ বাংলাদেশের মোট ভোটারের বড় অংশ এখন তরুণ প্রজন্ম, যারা পরিবর্তন চায়, কিন্তু কারও ওপর পুরো আস্থা পাচ্ছে না।


বাংলাদেশের রাজনীতির বর্তমান দৃশ্যপট এক অনিশ্চয়তার মোড়ে দাঁড়িয়ে। একদিকে বড় দলগুলোর জনপ্রিয়তা কমছে, অন্যদিকে নতুন বিকল্প শক্তি উঠে আসছে, কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—দেশের প্রায় অর্ধেক ভোটার এখনও চুপচাপ বসে আছেন। এই ভোটাররা শেষ মুহূর্তে কাকে বেছে নেবেন, সেটিই নির্ধারণ করবে আগামী দিনের রাজনৈতিক সমীকরণ।

সত্যের সাথে, সময়ের সাথে – ইনফো টুডে বাংলা

সময়োপযোগী খবর ও তথ্যভিত্তিক আপডেট শেয়ার করার একটি নির্ভরযোগ্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম
To Top