অনলাইন ডেস্ক: কন্যাসন্তানের ১৫ থেকে ১৬ বছর বয়সটি তার জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ বাঁকবদল। কৈশোরের এই সন্ধিক্ষণে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের পাশাপাশি সামাজিক নানা চাপ তাকে প্রভাবিত করে। এই সময়ে একজন অভিভাবকের, বিশেষ করে বাবার, সহানুভূতিশীল উপস্থিতি কন্যার আত্মবিশ্বাস ও মূল্যবোধ গঠনে অপরিহার্য। কারণ, বাবা কেবল পরিবারের একজন সদস্য নন, বরং তার কন্যাদের কাছে একজন নির্ভরযোগ্য বন্ধু ও পথপ্রদর্শক।
এই সংবেদনশীল সময়ে বাবাদের করণীয় সম্পর্কে মনোবিজ্ঞানীরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন, যা একটি মেয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গঠনে সাহায্য করতে পারে।
১. বিশ্বাস ও বন্ধুত্ব স্থাপন: এই বয়সে মেয়েরা নিজেদের আবিষ্কার করতে চায় এবং তাদের মনে নানা প্রশ্ন আসে। বাবার উচিত কন্যার সঙ্গে এমন একটি সম্পর্ক তৈরি করা, যেখানে সে নির্দ্বিধায় মনের কথা বলতে পারে। তাকে বিচার না করে তার কথা শোনা এবং তার ভাবনাকে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। এটি তাকে পরিবারে নিজের গুরুত্ব সম্পর্কে আশ্বস্ত করবে এবং তার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করবে।
২. স্বাধীনতা ও শৃঙ্খলার ভারসাম্য: কৈশোরে মেয়েরা স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা করে, যা অনেক সময় ভুল পথে চালিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে। একজন বাবা হিসেবে আপনাকে বুঝতে হবে কখন তাকে স্বাধীনতা দিতে হবে এবং কখন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কঠোর মনোভাবের পরিবর্তে যুক্তিসংগত নিয়ম তৈরি করা এবং তার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানো গুরুত্বপূর্ণ। এটি তাকে দায়িত্বশীল হতে শেখায়।
৩. শারীরিক পরিবর্তন নিয়ে খোলামেলা আলোচনা: ১৫-১৬ বছর বয়সে মেয়েদের শরীরে নানা পরিবর্তন আসে, যা তাদের জন্য দ্বিধাদ্বন্দ্বের কারণ হতে পারে। যদিও সাধারণত মায়েরা এই বিষয়ে কথা বলেন, কিন্তু বাবার পক্ষ থেকে এই পরিবর্তনগুলোকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করার মনোভাব মেয়েকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। এই বিষয়ে কোনো রকম অস্বস্তিকর মন্তব্য থেকে বিরত থাকা উচিত।
৪. অনলাইন সুরক্ষায় সচেতনতা: ডিজিটাল যুগে কিশোরীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচুর সময় কাটায়। বাবার উচিত নজরদারি না করে বরং তার অনলাইন নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন করা। কীভাবে অনলাইনে নিরাপদ থাকতে হয় এবং কোনো বিপদের সম্মুখীন হলে কার কাছে সাহায্য চাওয়া উচিত, সে বিষয়ে তাকে শিক্ষা দেওয়া জরুরি।
৫. ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন: বাবা হলেন মেয়ের জীবনের প্রথম পুরুষ। তার আচরণ দেখেই একটি মেয়ে ভবিষ্যতে অন্য পুরুষদের মূল্যায়ন করতে শেখে। তাই নিজের আচরণে নম্রতা, সহানুভূতি, দায়িত্ববোধ এবং নারীদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে বাবারা মেয়ের সামনে একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন।
একজন কিশোরী মেয়ের জীবনে বাবা হলেন নীরব অভিভাবক এবং নির্ভরতার প্রতীক। এই সময়টিতে বাবার সহানুভূতিশীল উপস্থিতি, বোঝাপড়া এবং ইতিবাচক আচরণ তার ভবিষ্যৎ গঠনে এক বিশাল ভূমিকা রাখতে পারে। মনে রাখতে হবে, একজন বাবার সঙ্গে যত বেশি ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠবে, একটি মেয়ে তত বেশি দৃঢ় ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে।