গাজার উদ্দেশ্যে অগ্রসরমান ‘সুমুদ ফ্লোটিলা’ চরম ঝুঁকিতে, হামলার প্রস্তুতিতে ইসরায়েলি নৌবাহিনী

INFO TODAY বাংলা


বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫—ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার দিকে ত্রাণ ও মানবিক সহায়তাবাহী ‘ওয়ার্ল্ড সুমুদ ফ্লোটিলা’ ১২০ নটিক্যাল মাইল দূরত্বে পৌঁছে চরম ঝুঁকিতে পড়েছে; ইসরায়েলি নৌবাহিনী বহরটি আটক ও হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।


ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার দিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবাধিকারকর্মী ও অধিকার আন্দোলনকারীদের নিয়ে গঠিত “ওয়ার্ল্ড সুমুদ ফ্লোটিলা” বর্তমানে গাজার উপকূল থেকে প্রায় ১২০ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছে। বুধবার (১ অক্টোবর ২০২৫) দুপুর পর্যন্ত পাওয়া সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে, ফ্লোটিলাটিতে থাকা জাহাজগুলো এখন আন্তর্জাতিক জলসীমার চরম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় প্রবেশ করেছে।

ফ্লোটিলায় ৪৫টি জাহাজে করে প্রায় ৫০০ মানবাধিকারকর্মী খাদ্য, ওষুধ, কাপড়সহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে গাজার দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। তাদের লক্ষ্য ইসরায়েলি অবরোধ উপেক্ষা করে গাজায় আটকে পড়া মানুষের কাছে সরাসরি মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া।

ফ্লোটিলার নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক নজরদারি চালাচ্ছে তুরস্কের ড্রোন Bayraktar Akinci। বহরটি ভূমধ্যসাগরে প্রবেশের পর থেকে তুরস্ক, ইতালি ও স্পেনের তিনটি যুদ্ধজাহাজ তাদের এসকর্ট করছিল। তবে দিগন্তে ইসরায়েলি নৌবাহিনীর উপস্থিতি টের পাওয়ার পর তারা কৌশলগতভাবে কোর্স পরিবর্তন করে সরে যায়।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ইয়েনেত জানিয়েছে, ইসরায়েলি নৌবাহিনী ইতোমধ্যে ফ্লোটিলাটি আটক করার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এ অভিযানে এলিট ইউনিট ‘সায়েতেত ১৩’-এর সেনারা অংশ নেবেন। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ পরিকল্পনা করছে, অধিকারকর্মীদের জাহাজ থেকে নামিয়ে আসোদ বন্দরে নিয়ে যাওয়া হবে, এরপর কেতজিয়োত কারাগারে পাঠানো হবে। যারা নির্দেশনা মানবে না, তাদের কারাগারেই আটকে রাখা হবে। আটক করা কিছু জাহাজ বন্দরে আনা হবে, বাকিগুলো ডুবিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে আসোদ বন্দরের আশপাশের হাসপাতালগুলোকে জরুরি প্রস্তুতিতে থাকতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে বন্দরে প্রায় ৫০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করেছে ইসরায়েলি প্রশাসন।

ফ্লোটিলায় থাকা একাধিক অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাত থেকে ইসরায়েলি নৌবাহিনীর জাহাজগুলো তাদের কাছে হুমকি দিয়েছে, যোগাযোগ ব্যবস্থা ১৫ মিনিটের জন্য বিঘ্নিত করেছে এবং ক্রুদের ভয় দেখিয়েছে। ফ্লোটিলার অন্যতম আয়োজক ডেভিড অ্যাডলার এক্স-এ পোস্ট করে বলেন, “আশঙ্কা করছি এটি আমার শেষ বার্তা। আমরা গাজার খুব কাছে, পরিস্থিতি ভয়াবহ।”

ফ্লোটিলায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে আছেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, যিনি ইতালি হয়ে এই অভিযানে যুক্ত হয়েছেন। এটি বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম অংশগ্রহণ, যা আন্তর্জাতিক মানবিক উদ্যোগে দেশের ভূমিকার গর্বিত প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এ অভিযানে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন রাজনৈতিক ও মানবাধিকার সংগঠন সংহতি জানিয়েছে। জাতিসংঘের বিশেষ দূত ফ্রান্সিসকা আলবানিজ, কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো, অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী মন্ত্রী ম্যাট থিসলথওয়াইট এবং তুরস্কের তরুণ আইনপ্রণেতা জেহরানুর আয়দেমির ফ্লোটিলার পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।

অস্ট্রেলীয় সহকারী মন্ত্রী ম্যাট থিসলথওয়াইট উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, “সব পক্ষের উচিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও নীতি মেনে চলা এবং সংঘাত থেকে বিরত থাকা।”

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দাবি, গাজায় অবরোধ “আইনসিদ্ধ” এবং ফ্লোটিলার এই অভিযান “অবৈধভাবে অবরোধ ভাঙার চেষ্টা।” তবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন স্পষ্টভাবে বলে, যেকোনো পরিস্থিতিতে দুর্গত জনগণের কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার অধিকার রয়েছে।

পরিস্থিতি ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ফ্লোটিলার সদস্যরা লাইভ সম্প্রচারের মাধ্যমে বৈশ্বিক সম্প্রদায়কে অবহিত করছেন, যাতে সম্ভাব্য হামলার প্রমাণ সংরক্ষিত থাকে। বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার সংস্থা ও সাধারণ জনগণ এ মুহূর্তে তাদের নিরাপত্তার জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।



বিশ্লেষকদের মতে, সুমুদ ফ্লোটিলা বর্তমান বিশ্বের মানবিক সংকট ও রাজনৈতিক বাস্তবতার এক স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি—যেখানে আন্তর্জাতিক আইন ও মানবতার স্বার্থ প্রায়ই শক্তির রাজনীতির কাছে পরাজিত হয়।


সূত্র: আল জাজিরা, ইয়েনেত নিউজ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নেটওয়ার্ক, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্ট।

সত্যের সাথে, সময়ের সাথে – ইনফো টুডে বাংলা

সময়োপযোগী খবর ও তথ্যভিত্তিক আপডেট শেয়ার করার একটি নির্ভরযোগ্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম
To Top